
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ ও দুর্নীতি » কমলনগরে গৃহহীনরা পাননি আশ্রয়ণের ঘর, বেশিভাগ ঘর খালি
কমলনগরে গৃহহীনরা পাননি আশ্রয়ণের ঘর, বেশিভাগ ঘর খালি
আমজাদ হোসেন আমু,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি;
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বরাদ্দের ঘর খালি পড়ে রয়েছে। কেউ থাকছে না বরাদ্দকৃত ঘরে। ঘরগুলো পরিত্যক্ত জীর্ণশীর্ণ পড়ে রয়েছে। যাদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ হয়েছে তারা গত আড়াই বছরে ঘরের কাছেও যাননি। বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ ঘর খালি রয়েছে। প্রকৃত সুফলভোগীরা ঘরের বরাদ্দ না পাওয়ায় এমনটা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের মিঞা পাড়া এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৩৬টা ঘর নির্মাধিন ঘর রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০টি ঘরে তালা ঝুলছে। বেশির ভাগ ঘরগুলো পরিত্যক্ত, মানুষের পরিবর্তে কোথাও লাকড়ির স্তূপ, কোথাও হাস-মুরগির খড়, কোথাও পাতার বস্তা, কোথাও মানুষের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে রয়েছে। কিছু ঘরে বৈদ্যুতিক লাইন নেই। কিছু ঘর যাদের নামে বরাদ্দ রয়েছে তারা থাকছে না, অন্যেরা দখল করে বসবাস করছে। ১৫টি ঘর অন্যের দখলে রয়েছে। ৩৫টি ঘর খালি পড়ে তালা ঝুলছে। এছাড়াও ৩০টি ঘরে মাঝেমধ্যে বরাদ্দকৃত লোক যাওয়া-আসার করছে। ভূমিহীন বা গ্রহহীন মানুষের বসবাস খুবই কম রয়েছে। ১৩৬টি ঘরের মধ্যে যাওয়া-আসার হিড়িক বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর বা আশ্রয়ণ বঞ্চিত হচ্ছে। ঘর বেচা-বিক্রির হিড়িক দেখা যায়।
রহিমজান বেগম বলেন, তিনি ৫৩৪নম্বর ঘরে বসবাস করছে, তবে ঘরটি তার নামে বরাদ্দ নয়। খালি থাকায় দখলে নেন তিনি। ইয়াসমিন বলেন, তিনি ৫৩৫নম্বর ঘরে দীর্ঘ আড়াই বছর বসবাস করছে। কার নামে ঘর বরাদ্দ রয়েছে জানেন না। এভাবে কহিনুর, বিবি পান্না, ফাতেমা, রেহানা বেগম, মরিয়ম বেগম, শাবানা, পাখি বেগম, রিনা বেগম বরাদ্দ ছাড়াই অন্যের বরাদ্দকৃত ঘরে দীর্ঘ বছর বসবাস করছেন। তারা গৃহহীনদের খালিকৃত ঘরগুলো বরাদ্দ দিতে আহবান জানান। এছাড়ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোন ধরণে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। মনোয়ারা বেগম জানান, তিনি ৫০৩নম্বর ঘর ৪০হাজার টাকায় কিনে দু’বছর বসবাস করছেন। বিবি ফাতেমা ৪৫৩নম্বর ঘর ২৫হাজার টাকায় কিনেন, নার্গিস বেগম ৪৪০নম্বর ঘর ১৫হাজার টাকায় কিনেন। এছাড়াও কিছু লোক ভাড়ায় বসবাস করছেন। মোহসেনা বেগম মাসে ৫০০টাকা করে ভাড়ায় থাকছেন। দিলারা বেগম বলেন, নদী ভাঙনের পর আশ্রয়ণের একটি ঘরে বসবাস করছি। দখলে থাকা ঘরের মালিক তিনি নন। তিনি আরও বলেন, এ আশ্রয়ণের বেশি ভাগ ঘরের তালা ঝুলছে। যাদের বাড়ি-ঘর আছে তারাই ঘর বরাদ্দ পান। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে প্রায় ৫০টি ঘর খালি পড়ে রয়েছে। যারা আসে না তাদের বাদ দিয়ে আমাদের বরাদ্দ দিলে খুবই উপকৃত হইত দাবি করেন। পান্না বেগম বলেন, যারা ঘর পাওনের তারা পাই নাই, যারা পাইছে তাদের বাড়ি-ঘর রয়েছে। তারা বাড়ি-ঘর রেখে আসতে চায় না।আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি তার বরাদ্দকৃত ঘরে দীর্ঘ আড়াই বছর বসবাস করছেন। তার দেখা মতে বেশি ঘর বরাদ্দ পাইছে বাড়ি-ঘর থাকা লোকজন। যার কারণে তারা আশ্রয়ণের বরাদ্দকৃত ঘরে বসবাস করেন না। প্রায় ৫০টি ঘর খালি পড়ে রয়েছে। কেউ ফিরেও তাকাননি। এসব ঘরে তালা ঝুলছে, ময়লা-আবর্জনা, মলে জীর্ণশীর্ণ পড়ে রয়েছে। প্রভাবশালীদের বরাদ্দ বাদ দিয়ে গৃহহীনদের বরাদ্দ দিলে তারা খুবই উপকৃত হইত। মাইনুর, মোহসেনা, পাখি, মরিয়ম বলেন,আশ্রয়ণের থাকা আব্দুল খালেক নামে ব্যক্তি প্রায় খালি ঘর দখল ও ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। জবর দখল করে আশ্রয়ণে থাকা পুকুরের মাছ রাতের আধাঁরে বিক্রি করেন। আব্দুল খালেক আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে। আব্দুল খালেক ঘর বিক্রি বা ভাড়ায় টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিষয়টি অস্বীকার করেন।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানান, উপজেলা ৫টি প্রকল্পে চর কাদিরা, চর লরেন্স, চর কালকিনি, তোরাবগঞ্জ, হাজিরহাট, চর মার্টিনে ৮২০টি ঘর নির্মান হয়েছে। চর কাদিরায় বেশি ঘর নির্মান করা হয়েছে। তবে তথ্যমতে সবগুলো আশ্রয়ণেই ঘর খালি রয়েছে গৃহহীনরা জানান।
উপজেলা দূর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তা(পিআইও) পারিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকারীভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের ঘরগুলো নির্মান করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা পাচ্ছে বা পেয়েছে বিষয়টি তদন্ত করবে উপজেলা ইউএনও, সহকারি কমিশনা(ভূমি) অফিস। তবে শুনেছি ঘরগুলোর বেশিরভাগই খালি রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত উজ জামান বলেন, তিনি উপজেলা নতুন যোগ দিয়েছেন। সরকারের সময়ে বরাদ্দকৃত আশ্রয়নের ঘরগুলোর খোজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।