কমলনগরে পরিত্যক্ত টিনশেট ঘরে ঝু্ঁকিতে চলছে দলিল রেজিস্ট্রি

আমজাদ হোসেন আমু,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি;
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে দীর্ঘ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত টিনশেট ঘরে চলছে দলিল রেজিস্ট্রির কার্যক্রম। ভবন সংকটে মাঝে-মধ্যে স্থবির হয়ে পড়ছে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ। বর্ষার পানিতে গুরুত্বপূর্ণ নথি দলিলপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিজে যাচ্ছে। আধাঁপাকা টিনশেট ঘরের মেরামত বা নতুন ভবনের দাবি করছে সংশ্লিষ্টরা।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানান, উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়ন পরিষদের একটি পরিত্যক্ত টিনশেট ঘরে সাব-রেজিস্ট্রির কার্যক্রম শুরু হয়। (২০১৩ সাল) দীর্ঘ এক যুগের সময় এই পরিত্যক্ত ঘরেই জনগুরুত্বপূর্ণ দলিল রেজিস্ট্রি কাজ চলছে।

সরেজমিনে বৃহস্প্রতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় হালকা বৃষ্টিতে অফিস রুম ও দলিল রাখা স্টোর রুমে পানি ঝড়ছে। আধাঁপাকা পুরানো টিনশেট ঘরে চলছে দলিল রেজিস্ট্রার কার্যক্রম। উপরে জার্ণশীর্ণ কার্পেট ছিড়ে পুটো ছিদ্র দেখা যায়, দেয়ালে স্যাঁতস্যাঁতে শেওলা পড়েছে, উপরে টিনের ছানি ছিদ্র ছিদ্র পুটো দিয়ে সূর্য্যের আলো ও বৃষ্টির পানি ঝড়ছে। কিছু স্থানে পানি আটকাতে পলিথিন মোড়ানো কাগজ দেখা যাচ্ছে। দরজাগুলো ঘুনে খেয়ে ঝরে পড়ছে। আস্তরের বালু ঝরে পড়ছে। জানালাগুলো ভাঙ্গা, ছিটকেরীতে মরিচা পড়েছে। নিচের ফ্লোর ভেঙ্গে মাটি দেখা যাচ্ছে। ফ্লোর পানিতে ভিজে রয়েছে। বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিচে নষ্ট পড়ে রয়েছে। ঝুঁকিতে প্রছন্ড গরমে ফ্যান চলছে। বিদ্যুৎ লাইনও ঝুঁকিপূর্ণ। টিনশেট ভবনের পিছনে মোটা করই গাছ ঢেলে পড়েছে। ঘরের চালে মরিচা ও পলিথিন বিছানো রয়েছে। ভবনের চারিদিকে ময়লা আবর্জনার স্তুপ দেখা যায়। সংস্কার বা মেরামতে অভাবে দিনদিন অকেজো ও ঝুঁকিতে পড়ছে পরিত্যক্ত টিনশেট ভবনটি।

নকলনবীশ নাইমুল আবেদীন রুপক বলেন, পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেট ঘরে চলছে জমির দলিল রেজিস্ট্রির কাজ। বর্ষায় পলিথিন দিয়ে কাগজপত্র ও দলিলসহ প্রয়োজনীয় নথি রক্ষা করতে হয়। পানিতে ভিজে সব নষ্ট হয়ে যায়। দেওয়ালের আস্তর খসে খসে পড়ছে, দরজা-জানালাগুলো জীর্ণশীর্ণ ভাঙ্গা। লোহার রটগুলো মরিচা পড়েছে। ভবনের পিছনে মোটা করই গাছ ঢেলে পড়েছে। যেকোন সময় ঝুঁকিতে থাকতে হয়। কখন টিনশেট ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে। ভিতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে কাজ করছে। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
এছাড়াও টিনশেট ভবনের নিরাপত্তা কোন বেষ্টনী নেই। যেকোন সময় জীর্ণশীর্ণ ভবন থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা নথি চুরি বা হারানোর সম্ভবনা থাকে। বৃষ্টি হলে ভবনের টিনশেট থেকে চুঁইয়ে মেঝেতে পানি জমে যায়। মেঝেতে পানি থাকায় পা রাখার জন্য আমরা ইট ব্যবহার করি। আর মাথার ওপর পলিথিন তো থাকেই। আমরা অনেক সময় অফিসের কাগজ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাই ভিজে যাই। বাহিরে মোটা করই গাছ পড়ে কখন জানি দুর্ঘটনায় পড়ি।

সেবাগ্রহিতা মো.বাহার মোল্লা বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সাব রেজিস্ট্রার অফিস। টিনশেন ঘরে জনগুরুত্বপূর্ণ জমির দলিল রেজিস্ট্রি হয়। ভবনের ভিতরে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভয় লাগে কখন জানি ভেঙ্গে পড়ে। সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সংস্কার বা নতুন ভবন খুবই দরকার মনে করছি।

দলিল লেখক খোরশেদ আলম রতন বলেন, তখনকার সময় ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত টিনশেটে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ শুরু হয়। যা এখনো চলছে। ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত মেরামত করা উচিত।

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা মো.মোরশেদ আলম বলেন, পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এ টিনশেট ঘর আমরা ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চরম ঝুঁকি নিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এটি ছিল ইউনিয়ন পরিষদের একটি পরিত্যক্ত টিনশেট ঘর। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত, ভাঙ্গা, জীর্ণশীর্ণ টিনশেট ঘরে জনগুরুত্বপূর্ণ দলিল রেজিস্ট্রির কাজ চলছে। ভিতরে দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা নথি রাখা যায় না। স্টোর রুমে বর্ষায় পানিতে সব ভিজে যায়। এছাড়াও টিনশেট ঘরের দেওয়াল খসে পড়ছে, উপরে টিনগুলো পুটো, বর্ষায় পানিতে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ দলিল বা কাগজপত্র চুরি হতে পারে। টিনশেট ঘরের সংস্কার বা নতুন ভবন করতে জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের একাধিক বার জানিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রাহাত উজ জামান বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংস্কারে অভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।