ঘানি টেনে চলছে জীবন যুদ্ধ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, মো: রেদওয়ানুল হক মিলন,
১২৫০ গ্রাম তেল উৎপাদনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি কিসামত এলাকার মধ্যবয়সী দরিদ্র খর্গ মোহন সেন ও রিনা রানী সেন দম্পতির ঘানির জোয়ালে হাঁটতে হয় ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার। একদিন ঘানি না ঘোরালে সংসারের চাকা ঘোরে না তাদের। ঘানি টেনেই চলছে তাদের জীবনযুদ্ধ।
সাধারণত ঘানি টানার জন্য ব্যবহার করা হয় গরু। কিন্তু তাদের গরু কেনার সামর্থ্য নেই। তাই সংসার চালাতে নিজেরাই ঘানি টানেন এ দম্পতি।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি কিসামত গ্রামে এক সময় অনেক পরিবারের ঘানি ছিল। কালের বিবর্তনে আর ইঞ্জিলচালিত যান্ত্রিক চাকার কারণে ঘানিশিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তের পথে। গুয়াবাড়ি কিসামত গ্রামে একটি বাড়িতে এখন মাত্র একটি ঘানি রয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ দম্পতি কাঠের তৈরি কাতলার ওপর প্রায় ৪৫০ কেজি ওজন বসিয়ে ঘাড়ে জোয়াল নিয়ে ঘানি টেনে আসছেন। একসময় তারা ঘানি ভাঙা ৬ থেকে ৭ কেজি তেল উৎপাদন করতে পারতেন।
বয়সের কারণে আগের মতো শরীরের শক্তি নেই। ১ থেকে ২ কেজি তেল উৎপাদন করতে পারলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালান এখন। বয়সের ভারে মাঝেমধ্যে শরীর ভালো থাকে না। সে সময়টা দরিদ্র সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় এক মুঠো ভাতের জন্য। মোহন-রিনার তিন ছেলে ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। ভিটা বাড়িটুকুই সম্বল তাদের।
স্থানীয় অশেষ রায় বলেন, এক সময় এ গ্রামে অনেক ঘানি ছিল, এখন নেই বললেই চলে। এই একটি বাড়িতেই রয়েছে। খর্গ মোহন সেন এর পরিবার অভাবগ্রস্ত, গরু কেনার সামর্থ্য নেই। ঘাড়ে জোয়াল নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন।
মোহন দম্পতি জানান, টাকার অভাবে গরু কিনতে পারি না, স্বামী-স্ত্রী নিয়ে এক জোয়াল টানি, একদিন জোয়াল টানতে না পারলে খাব কী? বয়স হচ্ছে, আগের মতো পারি না, দুটি না হলেও একটি গরু থাকলেও এমন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম স্বামী-স্ত্রীর করতে হতো না। মাঝেমধ্যে আমার বড় ছেলে ঘানি টেনে সহযোগিতা করে।
তিনি আরো বলেন, আগের মতো দেশি সরিষা পাওয়া যায় না, গ্রামে ঘুরে ঘুরে সরিষা সংগ্রহ করি, তার পরও দাম বেশি। বাপ-দাদার সঙ্গে জোয়াল (ঘানি) টানতে টানতে অন্য কোনো পেশা শিখতে পারিনি। প্রায় পাঁচ যুগ ধরে নিজে জোয়াল টানছি। এখন আর শরীর চলে না, স্ত্রীর সঙ্গে বড় ছেলে জোয়াল টানে। একটি গরু থাকলে