মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » জীবন চিত্র | ফিচার » পায়ে চালিত রিকসা বন্ধ, আয়-রোজগার নাই, সংসার চলে না জয়নাল মিয়ার
পায়ে চালিত রিকসা বন্ধ, আয়-রোজগার নাই, সংসার চলে না জয়নাল মিয়ার
আমজাদ আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
পায়ে প্যাডেল মেরে রিকসা চালিয়ে সংসারের ব্যায় মিটিয়ে জীবন-যাপন করেন জয়নাল আবেদিন। তার বয়সের পুরো সময়টা কাটিয়েছে রিকসা চালিয়ে। প্রতিদিন আয় হতো ৬-৭ শত টাকা। যা দিয়ে সংসার ছেলে-মেয়ে সহ যাবতীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল। এখন আয় নেই বললেই চলে। কোনমতে জীবন সংসার চলছে। খেয়ে -না খেয়ে বেঁচে আছেন। সংসারের ঘানি টানতে এটা (পায়ে চালিত) রিকসা নিয়ে বের হতে হয়। তবে এতে যাত্রী নয়, বাজারে বিভিন্ন দোকানের মালামাল নেয়া-আনার কাজ চলে। এতে দৈনিক এক থেকে দেড়শত টাকা আয় হয়। এটা দিয়ে তো আর জীবন চলে না…! পায়ে চালিত রিকসা গুলো চোখে পড়ে না। প্রায় দু-তিন শত রিকসার চালক এখন বেকার। তবে কিছু কিছু মানুষ অন্য কাজ করছে। আর যাদের সমর্থ্য আছে তারা কেউ কেউ ব্যাটারি চালিত রিকসা কিনে চালাচ্ছে।
একটা পায়ে চালিত রিকসা একটা পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস ছিল। বেশির ভাগই পায়ে চালিত রিকসা চালকদের করুন দশা। প্রতিটি পায়ে চালিত রিকসা চালকদের বয়স অনেক হয়েছে। আমার বয়সে যারা ছিল। তারা রিকসা বাদ দিয়ে অন্য কাম করছে। কারণ আমাদের বয়সে ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলো চালানো সম্ভব হয় না। আবার অর্থেরও দরকার আছে। ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলোর প্রচুর দাম। এতবেশি দাম দিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকসা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলো রাস্তায় বের হতেই পায়ে প্যাডেল চালিত রিকসা অচল হয়ে যায়। যাত্রীরা দ্রুত যাতায়াত করতে চায়। তারা পায়ে চালিত রিকসায় উঠতে চায় না। এগুলো পায়ে মেরে চালাতে হয়। যার কারণে ব্যাটারি রিকসার অনেক পরে পৌঁছে।
দুই-তিন বছর আগে পায়ে চালিত রিকসা প্রতি রোড়ে শত শত দেখা যেত। এখন চোখেও পড়ে না। ব্যাটারি চালিত রিকসা রাস্তায় চালু হওয়ার কিছুদিন পরে যার যার মত করে পায়ে চালিত রিকসা বন্ধ হয়ে যায়।
পায়ে চালিয়ে রিকসায় যাত্রী নিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে যাতায়াত করা যেত। একমাত্র যান বাহন ছিল পায়ে চালিত রিকসা। নতুন বউ আত্মীয় বাড়িতে আসা-যাওয়া উপায় ছিল এই রিকসা। কত কদর ছিল এসব রিকসার। এখন তো কেউ ফিরেও তাকাতে চায় না। মাঝে মাঝে হতাশ লাগে। কিন্তু কি করমু কোন উপায় নেই। বয়স প্রায় ৬৫ বছর। এই বয়সে তো.আর.. শরীর কুলায় না।
পঁচিশ বছর এই রিকসা চালিয়ে সংসার টানছি। কখনো বড় কোন অসুখে পড়িনি। এখনো আল্লাহ চাইলে সুস্থ আছি। পায়ে চালিত রিকসাগুলো যাতায়ের খুবই নিয়ন্ত্রণ ছিল। কখনো বড় কোন দুর্ঘটনা হয়নি। রিকসা চালকদের বেশির ভাগই সুস্থ -সবল আছে। পায়ে রিকসা চালালে শরীর-স্বাস্থ্যের উপকার হয়। শরীরের ব্যায়াম হয়। এই রিকসা পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না। অথচ ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলো দেশের বড় সম্পদ বিদ্যুৎ অবচয় করে। যা দেশের বড় ক্ষতি সাধন করছে।
ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলো বের হয়ে পায়ে চালিত রিকসা চালকদের জীবনকে কঠিন করে দিয়েছে। জীবন চালাতে অনেক কষ্ট হয়। ঠিকমত আয়-রোজগার নেই। যার কারণে সংসার চলে না। অন্য কামও করতে পারি না। তাই এখনো চালাচ্ছি।
কথা গুলো বলছি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর ফলকন ইউপি’র মো.জয়নাল আবেদিন মিয়ার সাথে। জয়নাল মিয়ার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। মেয়েও বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। জয়নাল মিয়ার বউ নিয়ে আলাদা সংসার করছে।
আধুনিক প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি দিয়ে ব্যাটারি এবং বিদ্যুৎ সংস্পর্শে নতুন মোড় নিচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থার। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে শতশত ব্যাটারি চালিত রিকসা। যেগুলোর বেশির ভাগই রাস্তায় লোকাল যাত্রীর নজর দখল করে পেলছে। বর্তমান যুগে যাত্রীরা সৌখিন ও দ্রুত যাতায়াত করতে চায়। যার কারণে ব্যাটারি চালিত রিকসার মধ্যে পায়ে চালিত (বাংলা রিকসা) বন্ধ হয়ে যায়। এখন দেশে বা গ্রামে পায়ে চালিত রিকসার দেখা নেই বললেই চলে। এটি সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে। দু-একটি চোখে পড়লেও এগুলো এখন আর যাত্রী টানছে না। টুকটাক মালামাল টানতে ব্যবহারিত হচ্ছে।
কয়েকজন পায়ে চালিত রিকসা চালক জানান, ব্যাটারি চালিত রিকসা রাস্তায় আসায় তাদের রিকসায় ভাড়া বা যাত্রী উঠে না। আয়-রোজগার কমে গেছে। তাই রিকসা ভাঙারি হিসেবে বেঁচে দিয়েছি। ব্যাটারি চালিত রিকসা তারা চালাতে পারে না। এবং কিনতেও দাম বেশি। তবে জীবন-সংসার চালাতে খুব হিমশিম খাচ্ছে। কোনমতে চলছে। জীবনের স্থির গতি।
পায়ে ও ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষক সানা উল্লাহ সানু বলেন, পায়ে চালিত রিকসাগুলোর এক সময় কদর ছিল। যুগের সাথে তাল মিলাতে ব্যাটারি চালিত রিকসা আবিস্কৃত হয়। এতে মানুষ দ্রুত গতিতে যাতায়াত ব্যাটারি চালিত রিকসা ব্যবহার করছে। তবে ব্যাটারি চালিত রিকসাগুলো দেশের বড় সম্পদ বিদ্যুৎ অবচয় করছে।
সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান সাজু বলেন, পায়ে চালিত রিকসাগুলো পরিবেশ বান্ধব ছিল। এগুলোর চালকদের এখন করুন দশা। তাদের দেখা নেই বললেই চলে। সংসার জীবনে তারা দু:খে কষ্টে দিনপার করছে। পায়ে রিকসা চালিয়ে তাদের জীবন চলত। তারা এখন সম্পূর্ণ বেকার। তবে পায়ে চালিত রিকসা চালকদের বেশির ভাগই সুস্থ -সবল জীবন অতিবাহিত করছে। ব্যাটারি চালিত রিকসা গুলো পরিবেশ ও বিদ্যুৎ অবচয় করছে।