রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে বাংলার কন্যাদের জয়জয়কার
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে বাংলার কন্যাদের জয়জয়কার
নজরুল ইসলাম,লন্ডন
এ যেন সিলেটি আঞ্চলিক গানের সেই লিরিক্স ‘দেশ-বিদেশে বেটাগিরি, আমরা হক্কল ছিলটি’! বহু দেশের বহু বর্ণের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একত্রে ব্রিটেনে বাস করে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই এরা রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নমত ও পথের সমর্থক। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান এখন অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক শক্ত এক ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানকার ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের এক বৃহৎ অংশ ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন ও বিচার ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও সমাজনীতিতে বিশেয ভূমিকা রেখে চলেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিতে বাঙালীদের অভিষিক্ত হওয়াই এর প্রমাণ।
গতকাল যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি চার কন্যা রুশনারা আলী, বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আফসানা বেগম জয় পেয়েছেন। রুশনারা আলী চতুর্থবার, টিউলিপ সিদ্দিক ও রুপা হক তৃতীয়বার ও আফসানা বেগম প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত এমপিরা লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে লড়েছেন।
১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং বৃহস্পতিবার বৃটেনের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বহুল আলোচিত ব্রেক্সিটের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের এ সাধারণ নির্বাচনে ব্রেক্সিট ইস্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। এর আগে ২০১৭ সালের ৮ জুন এবং ২০১৫ সালের ৭ মে ভোট গ্রহণ হয়েছিল।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের মোট ৬৫০টি নির্বাচনী কেন্দ্রে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
এ নির্বাচনের অধীনে মোট ৬৫০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হবে। নিবাচন ক্যাম্পেইনে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ভোটে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ দল সরকার গঠন করলে ব্রেক্সিট সম্পন্ন হবে আর লেবার দল ক্ষমতায় গেলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোট হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেন্ডেট কনজারবেটিভ পার্টিকে দেশ পরিচালনায় একটা শক্ত অনস্থান তৈরিতে সহায়তা করেছে।
রুশনারা আলী এমপি
টানা চতুর্থবারের মতো এবারের নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। তিনি ৪৪ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। কনজারভেটিভ পার্টির নিকোলাস স্টোভোল্ডকে ৩৭ হাজার ৫২৪ ভোটে পরাজিত করেছেন তিনি। ২০১০ সাল থেকে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে টানা তিনবার লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। ৪৪ বছরের এ রাজনীতিকের জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ভুরকি গ্রামে। ছোটো বেলায় মা-বাবার সঙ্গে লন্ডনে যান। ২০১০ সালের পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও ভোট ব্যবধান বাড়ে।
টিউলিপ সিদ্দিক এমপি
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও শেখ রেহানার দ্বিতীয় সন্তান। তিনি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে জয় পান । শুক্রবার পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, ২৮ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। টিউলিপের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভের জনি লুক পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৯২ ভোট।
নির্বাচিত হওয়ার পর টিউলিপ বলেন, এটা খুবই আনন্দের বিষয় যে আমি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে যারা আবার নির্বাচিত করেছেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ প্রথমে ইংরেজি এবং পরে রাজনীতি, নীতি ও সরকার বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রূপা হক এম পি
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে আবার জয় পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক। তিনি লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে তৃতীয় মেয়াদে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। লেবার দলীয় প্রার্থী রূপা হকের প্রাপ্ত ভোট ২৮ হাজার ১৩২। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী জুলিয়ান গেল্যান্ট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩২ ভোট।
২০১৫ সালে রূপা হক প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ওইবার তিনি মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ২০১৭ সালে তিনি জিতেছিলেন ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে। এবার ১৩ হাজার ৩০০ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
রূপ হক কেমব্রিজে রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন পড়েছেন। তিনি পড়াচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান, অপরাধবিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যায়নের মতো বিষয়। শিক্ষক রূপা এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আফসানা বেগম এম পি
এদিকে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আফসানা বেগম। পপলার অ্যান্ড লাইস হাউস আসন থেকে ৩৮ হাজার ৬৬০ ভোট পেয়ে সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পার্লামেন্টেরিয়ান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এবারই প্রথম লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক কাউন্সিলর ও মেয়র মনির উদ্দিন আহমদের মেয়ে।
উল্লেখ্য যে, এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৯ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। যাদের মধ্যে ৭ জনই নারী। বিরোধী লেবার পার্টি থেকে লড়েছেন সর্বোচ্চ ৭ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এক জন করে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।