শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

Bhorer Bani
শুক্রবার, ২০ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » ফিচার » খাদিজার চোখে নেই করোনার আতঙ্ক
প্রথম পাতা » ফিচার » খাদিজার চোখে নেই করোনার আতঙ্ক
৭৩৮ বার পঠিত
শুক্রবার, ২০ মার্চ ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

খাদিজার চোখে নেই করোনার আতঙ্ক

আমজাদ হোসেন আমু :

---

দেশ যখন মহামারী করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত তখন খাদিজাদের চোখে নেই তার বিন্দুমাত্র ভয়। কথা হয় লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট নদীর পাড়ে খাদিজা’র সাথে। খাদিজা বলেন, করুনা এডা কি? এডা কি করে? এসব করুনার ডর লাগে না। জীবনে বাচঁনের ডর নাই! করুনা আর কি করবো.

যখন বললাম করোনা একটা রোগের নাম। এটা হলে মানুষ মারা যায়। তখন সে বলে আমরা তো প্রতিমুহুর্তেই মরি আর ডুবি। স্বামী পোলা মাইয়া গোরে লই কোনমতে বাঁচি রইছি।

খাদিজার ৪ ছেলে ১ মেয়ে এবং স্বামীর সংসার। নদীতে নৌকা দিয়ে মাছ ধরে জীবন জীবিকা চালায়। স্বামী হারুন সর্দার বড় ছেলে সবুজ বয়স কুড়ি বছর। গত দুই মাস আগে বিয়ে দেয় মজু চৌধুরী ঘাটে এক বেদেনীর মেয়ে সাথে। নয়া বউ এখনো নায়ে তোলেনি। এক মেয়ে শারমিন বয়স ১০ বছর। আরও তিন ছেলে সুজন,স্বজন এবং আলী হায়দর। আলী হায়দর ছোট বয়স মাত্র এক বছর। সুজন, স্বজন বয়স নয় আর আট। দুজনই সাইকেল চালাচ্ছে।

নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে সকল ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সরকার। এতেই বিপরিত.. নদীতে মাছ না ধরতে পারলে, নুন আনতে পান্তা পুরাই খাদিজার পরিবারে। না খেয়ে থাকতে হয়। কোন দিন এক বেলা কোন দিন না খেয়ে দিন পার করতে হয় খাদিজাসহ পরিবারের সবাইকে।
খাদিজা বলেন, ছোট ছোট পোলা,মাইয়া নিয়া খুব ই সমস্যাই আছি। নদীতে মাছ ধরতে যাইতে পারি না। কোনমতে দিন পার করতেছি। নদীতে মাছ ধরতে নিষেধ করছে। তাই মাছ ধরি না।

---

মাছ না ধরতে পারলে কি করেন,জানতে চাইলে বলেন,কোন কাম নাই, কোনমতে চলি। সর্দার আছে দোয়ান থেইকা খাওন বাকি লইয়া দেয়। পরে মাছ ধইরা বেইচা শোধ করি।

তার স্বামী হারুন সর্দার অন্য কোন কাজ করে কিনা জানতে চাইলে খাদিজা বলেন, নদীতে মাছ ধরা ছাড়া তেমন কোন কাজ তার স্বামী জানে না। তাই তো সমস্যা। মাছ ধরাই তাদের একমাত্র পেশা।

খাদিজার জন্ম বরিশাল সাহেবেরহাট এলাকায়।
খুব ছোট বয়সে তার বিয়ে হয় হারুন সর্দারের সাথে। তার বয়স যখন ১২-১৩ বছর তখন তার বিয়ে হয়। তার জন্ম নদীর কোলে ছোট্র নৌকাতে। যে নৌকাতে জন্ম সেই নৌকাতেই মরতে হয়।

খাদিজারা জাতে বিশ্বাসী না। তারপরও তারা তাদের বেদেনী জাতের বলেই জানেন। তাদের মধ্যে আরো জাত আছে। খাদিজাদের যেমন নদীর কোলে নৌকাতেই জন্ম এবং মরতে হয়। তো তাদের মৃতদেহ কি করে জানতে চাইলে বলেন, তারা যেখানে থাকে সেখানে কারো কাছ থেকে মৃতদেহ মাটি দিতে কবর কিনে নেয়।তারপর সেখানে মাটি দেয়। একটা কবরের জায়গার দাম ১০-১২ হাজার টাকা।

খাদিজার বাবা-মা জীবিত আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, না তারা জীবিত নেই। তার বাবা ১৫ বছর আগে বরিশাল হুজুরের খাল এলাকায় মারা গেছে। তখন সেখানে মাটি দেয়া হয়। তবে কবর এখন আর নেই। সেটা নদীতে ভেঙে গেছে। মার কবর এখনও আছে। তবে কবর দেখতে যাওয়া হয় না।

খাদিজার তো নিজস্ব কোন বাড়ি নেই। বাড়ি করতে ইচ্ছে আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, সবার যেমন বাড়ি থাকে। তারও ইচ্ছে আছে নিজের বাড়ি হবে। কিন্তু এ ইচ্ছে কখনো পূরণ হবে কি না সে জানে না। সে বলে, নদীতে মাছ ধরে জীবন চলে। প্রতিদিন মাছ বেঁচে যে টাকা পায় তাতে ছেলে মেয়ে স্বামী নিয়ে জীবন চলে না। সেখানে বাড়ির জন্য জমি কেনা এবং বাড়ি করা যায় না।

---

ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে মন চাই, বললে জানান, সবাই তো চাই তার ছেলে, মেয়েরা লেখা পড়া করুক। কিন্তু আমাদের তো নদীতে নৌকাতেই থাকতে হয়। লেখাপড়া কেমনে করামু। এদের স্কুলের খরচ কই পামু।কোনমতে জীবন চলে।

ছেলে সুজন বয়স নয়। তার সাথে কথা হয়। সুজন কেমন আছ? ভালা আছি। সুজন তুমি কি স্কুলে যাও? না.! ইস্কুলে যেতে চাই। তই মায় ইস্কুলে যেতে দেয় না। সুজন যেমন বলল ঠিক স্বজন আর শারমিনও একই কথা বললো।

পুরো মুহূর্তে খাদিজা তার পরিবার সংগ্রামের কথা জানালো। তাদের জীবনের তাগিদে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেতে হয়। থাকতে হয় একস্থানে কয়েক বছর। তারা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাটে বিগত সাত বছর ধরে রয়েছে। এখানে গড়ে তুলেছেন নিজের মত করে জীবন আর জীবিকা। ছোট্ট একটা নৌকায় গড়ে তোলে থাকার জায়গা। তবে ভাবনার বিষয় যে নৌকাতে জীবন যাপন, সে নৌকা দিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবন চালাই। ঝড়, তুপান বা বর্ষা হলে অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু চলতে হয়। কি আর করমু। বাচ্চাদের অসুখ হলে দাওয়া ও ডাকতারি ঔষধ খাওয়াই।

নৌকা তো অনেক ছোট। সেখানে কিভাবে ৬ জন মানুষ থাকে জানতে চাইলে বলেন, আমাগো থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়া গেছে। সবাই যেমনে থাহে হেমনে থাহি। তই রাইতে শুইতে একটু সমস্যা হয়। তয় কি করমু, থাকতে তো অইবোই। খাদিজা কথা গুলো বলতে বলতে হেঁসে দেয়। আমাকে বলে কাহা আমাগো এসব জাইন্না কি অইবো। আমাগোরে কেউ কিছু দেয় না।

কথা গুলো শুনতে শুনতে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। যেখানে আমরা বড় বাড়ি, বড় গাড়িতে চলে বেড়াচ্ছি। সেখানে খাদিজাদের মত কত মানুষ নদীতে ছোট্ট একটা নৌকায় বসবাস ও সে নৌকা দিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবন চালাই।

খাদিজার স্বামী মানুষ একটু বদ মেজাজে। যখন কথা বলছিলাম। দেখলাম হঠাৎ তাকে ডাকল, একটু দেরিতেই রেগে গেল। খাদিজা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল। তখন দেখলাম তার চোখে মুখে হতাশা আর চন্নছাড়ার ভাব। স্বামীর ডাকে আর বেশি কথা বলতে পারি নি।

---

তবে যতটুকু মনে হল, দেশের হাজার খাদিজার জীবন এমন সংগ্রাম আর যুদ্ধেই কেটেঁ যাচ্ছে। এদের পাশে জীবন গড়ে বাচাঁ সাধ্য কারো নেই। খাদিজার চোখে অনেক স্বপ্ন দেখলাম। তার সাথে কথা বলে বুঝলাম জীবন যুদ্ধে থেমে নেই। তারপরও স্বপ্ন তাকে প্রতিনিয়ত দৌড়াচ্ছে। জীবনে ভালো কিছু করতে তারও অনেক ইচ্ছে।

খোলাডাক / এনএস



কমলনগরে বহিরাগত যুবক দিয়ে অস্ত্রোপচার, স্বামী-সন্তান নিয়ে আড্ডায় মগ্ন ডা. ফাতেমাতুজ যাহরা
বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না-এমপি নজরুল ইসলাম বাবু
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী জাসদের মোশারেফ
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে দু’জনের মনোনয়ন বাতিল
কমলনগরে ডেঙ্গু জ্বর মানে-ই হঠাৎ আতংক
লক্ষ্মীপুরে তৃণমুলে আলোচনায় যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ভুলু
কমলনগরে বিএনপি’র অফিস ভাঙচুর
কমলনগরে প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা, বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ র্যালী
জামালপুরে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আ’লীগে মতবিনিময় সভা
জামালপুরে যুবলীগের তারুণ্যর জয়যাত্রা সমাবেশের প্রস্তুতি সভা
সরিষাবাড়ীতে জনতার সাথে মতবিনিময় করেন প্রকৌশলী মাহবুব হেলাল
ঈদের শুভেচ্ছা জানান ভাইস চেয়ারম্যান শিলা
ঈদের শুভেচ্ছায় আ’লীগ নেতা সাজু
“ডেইলি ভোরের বাণী” পরিবারে ঈদুল আজহা’র শুভেচ্ছা
কমলনগরে স্মার্ট ভূমিসেবায় চালু হয়েছে গ্রাহক সেবা